Home STORY তোমার নামে লিখেছি হৃদয় (অনুগল্প)
Home STORY তোমার নামে লিখেছি হৃদয় (অনুগল্প)

তোমার নামে লিখেছি হৃদয় (অনুগল্প)


 

_"আরাফী ভাই.? "


শুনশান নীরবতার মাঝে যেন শব্দটা বার বার প্রতিফলিত হতে লাগলো।চৈতী কারো সাড়া না পেয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো,ঠিক তখনি এক গুরুগম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ শুনতে পেল,


_"ওর নাম আরাফাত, আরাফী নয়, সুন্দর করে না পারলে শুধু ভাইয়া বলবা।"


নিজের সামনে নিজের ভাইয়ার ফ্রেন্ড শামীমকে দেখে অবাক হলো, উনি তো বাড়িতে ছিল না হঠাৎ কই থেকে এলো। 


_"তুমি কই থেকে এলে?"


শামীম পেন্টের পকেটে হাত রেখে বলল,


_"সেটা জেনে তোর কি কাজ? 

আর আমাকে তুমি বলিস কোন সাহসে বড়দের আপনি করে বলতে সেটা কেউ শিখিয়ে দে নি.?"


চৈতী বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো, ঘাড় হয়েছে তার, এই লোকের সাথে কথা বলাই অন্যয়,সব কথায় দোষ খুঁজে বেড়ায়।সে তো বিকেলে এই ছেলেকে বের হতে দেখেই মনে করেছিল শামীম সাহেব বাসায় নেই।সে নমনীয় ভাষায় বলল,


_"আপনি আমার সাথে সবসময় এমন করেন কেন.?"


শামীম নিজের ঠোঁটের কোণে হাসি লুকিয়ে বলল,


_"তো কেমম করবো? কোলে নিয়ে নাচবো?"


চৈতী মিনমিনে স্বরে বলল-


_"তাও তো পারতেন।"


চৈতী মনে করলো এবার ও সব বারের মতো না শুনার ভাব করে চলে যাবে। কিন্তু তাকে অবাক করে প্রথম বারের মতো এমন কথার উত্তর করল,


_"না পারিনা,সবাই যেমন সব পারে না তেমন আমিও তোর প্রেম এ পড়তে পারিনা। আমার শহরে প্রেমে পড়া বারণ। "


চৈতী বলার মতো কিছু পেল না তার চোখের কোণে জমানো অশ্রুটাকে তাচ্ছিল্যের সহিত মুছে ফেলল। অনেক তো এই প্রেম প্রেম খেলা, কতবার শামীমকে কত ভাবে বুঝাতে চেয়েছে প্রতিবার শামীম এড়িয়ে গিয়েছে। তবু বোকা অষ্টাদশী প্রহর গুনতো শামীম শহর থেকে ফিরার, কিন্তু আজ তো সামনাসামনি বলই দিলো তাহলে এইবার ভুলে যাওয়ার খেলা হোক দেখা যাক কে জিতে.?চৈতী গুনগুনিয়ে গান ধরলো ধরা গলায়,


_"চাইলে চলে যা আমায়,

চাইলে ভুলে যা,

চাইলে কথা দে ছেড়ে একলা যাবি না।"


_____________________


দেখতে দেখতে সাত দিন কেটে গেল, শামীমের আবার ব্যস্ত জীবনে ফিরে যাওয়ার সময় হলো। চৈতী আজ সাতদিন ভুলেও শামীমের সামনে যায় নি। বলা যায় নিজেকে পুরাপুরি গুটিয়ে নিয়েছে।আজ হঠাৎ সন্ধ্যায় ছাঁদে আসতে ইচ্ছে হলো তাই ছাদে এলো। আকাশ তখন অন্ধকার, আকাশে চাঁদ নেই।প্রকৃতি তখন নীরব, মনে হচ্ছে পুরো প্রকৃতি জুড়ে শোক বিরাজমান, গ্রামে এমনেও খুব তাড়াতাড়ি রাত হয় আজ যেন নীরবতা সমস্ত জগতে বিরাজ করছে, কিসের এতো শোক,?সেই পাষাণ পুরুষ চলে যাবে বলেই কি এতো শোক। চৈতী আর ভাবতে চাইলো না, সে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো, তখনি ছাদের উপর কেউ উঠে এলো, সে শামীম কে দেখে না তাকিয়ে চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ শামীম হঠাৎ করে অন্য নামে ডাকলো, 


_"চৈতালি "


_"বল"


_"তুই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস.?"


চৈতী ভাবলেশহীন ভাবে বলল,


_ "তা যাচ্ছি বটে!"


_"কেন. ? আমি যে নিতে পারছি না। আমার যে তোকে রাগাতে ভালো লাগে, তোর কাজল চোখের চেয়ে বেশি ভালো লাগে তোর টলমল করা চোখ, তোর হাসি থেকে তোর রাগ পছন্দ, যার সব উল্টো তার প্রেমে পড়া মানায় না।তুই হলি পূর্ণিমার চাঁদ চৈতালি, আমাকে তোর পাশে মানায় না। "


চৈতালি কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল,


_"আমাকে মানাবে কেন? মানাবে তো শহরের সুন্দরীদের তাই নয় কি.? "


_"আমাকে কথা তো শেষ করতে তো দিবি.?ভাই"


_"আমি তোমার কোন জনমের ভাই?"


_"আচ্ছা আগে আমি কথা শেষ করি,আমাকে যেমন তোর পাশে মানায় না, তেমন আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ও মানায় না, আমি তোর পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারিনা বুঝলি?


মেয়েটার চোখে তখন সুখের অশ্রু, শামীম হাঁটু গেড়ে চৈতী সামনে বসলো মুখে বলল,


_"আমার আম্মাজানের বয়স হয়েছে, তার এখন একজন মেয়ে দরকার, যে তাকে তার ঔষধ এর জন্য বকাঝকা করবে,আর আমার একজন বউ দরকার,তোর মা বাবার চৈতী থেকে আমার চৈতালি হবি? "


চৈতী টলমল চোখে মাথা নাড়ালো। শামীম উঠে এসে মেয়েটাকে বুকে টেনে নিলো, গুনগুনিয়ে গাইলো,


_"আর নয় অজানা, 

এ প্রেমের ঠিকানা,

শুধু বারবার বলতে ইচ্ছে হয়। 

তোর নামে…তোর নামে…

তোর নামে লিখেছি হৃদয়। "


___________সমাপ্তি __________


Comments

You May Also Like