Home STORY অনুভূতি (পর্ব _৯)
Home STORY অনুভূতি (পর্ব _৯)

অনুভূতি (পর্ব _৯)

 


#গল্পঃ- অনুভূতি 

#পর্ব-০৯


মিহুর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভি।মিহুর দৃষ্টি নিচের দিকে।উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়াছে সে।অভির রাগ হয়।ঠোঁটটার উপর এমন অত্যাচার চালাচ্ছে কেন মেয়েটা?পাশেই দাড়িয়ে আছে সাদিফ।

সাদিফ হাল্কা গলা ঝেড়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলে,

-ভেতরে ঢুকতে দিবি না?

অভির হুঁশ ফিরে।দ্রুত সামনে থেকে সরে দাড়িয়ে বলে,

-হ্যাঁ,হ্যাঁ,আয়।

সাদিফ মুচকি হেসে ভিতরে ঢুকে।মিহুও ঢুকে তার সাথে।

অভিদের বাসাটা বেশ বড়ো।উপরতলার একদম কোণার ঘরটা অভির।

মিহু সাদিফের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।আশেপাশে মেহমান।সবাই অচেনা।মিহু সহজে মিশতে পারেনা মানুষের সাথে।তার সময় লাগে।


রুবিনা আহমেদ কয়েকজন এর সাথে কথা বলছিলেন।সাদিফ তার দিকে এগিয়ে যায়।হাসিমুখে সালাম দিতেই উনি তাকায়।মিহুও সালাম দেয়।উনি সালামের উওর দিয়ে বলেন,


-কেমন আছো বাবা?

- আলহামদুলিল্লাহ আন্টি।আপনি কেমন আছেন?

-ভালো আছি।মিহুর গালে হাত রেখে বলেন,মিহু তাই না?


মিহু অবাক হয়।ভদ্রমহিলা ওর নাম জানল কি করে?মৃদু সরে উওর দেয়,"জি"।


-ভারি মিষ্টি দেখতে তুমি।অভির পছন্দ আছে...


মিহু চমকায়।কথার মানে বুঝতে না পেরে বলে,


-জি আন্টি?


রুবিনা বেগম দাঁত দিয়ে জিভ কাটেন।অভি তাকে এসব বলতে মানা করেছিল।তবুও সে বলে ফেলেছে।তাই কথা কাটানোর জন্য বলেন,


-মিহু তো আগে কখনো আসোনি।সাদিফ তো চিনোই সব।ওকে বাগানটা ঘুরিয়ে দেখাও।ওর ভালো লাগবে।অভিও যা সাথে।এখানে সব বড় মানুষদের আড্ডাখানা।বুড়ো মানুষের জন্মদিনতো!!তোমরা বাচ্চারা বোর হবা।বলেই হাসেন উনি।


মিহু মুগ্ধ হয়।ভদ্রমহিলা এতো সুন্দর করে কথা বলে।দেখতেও বেশ সুন্দরী।চেহারায় বয়সকের ছাপ আছে তাও সুন্দরী।মিহু মনে মনে বলে,"এজন্যই মনে হয় উনিও এতো সুন্দর"।কিসব ভাবছে সে!!হুহ্!!


__________

বাগানে এসে দেখে ঘুটঘুটে অন্ধকার।অভির ভ্রু কুচকে আসে।সব লাইট তো জ্বালানো ছিলো।বন্ধ করলো কে!!

মিহু সাদিফের গা ঘেঁষে দাড়ায়।সাদিফ একহাতে জড়িয়ে ধরে তাকে।অন্ধকার ভয় পায় মিহু।


অভি"একটু দাড়া,আমি দেখছি"বলে ভেতরে যায়।কিছুক্ষনের মধ্যেই সব লাইট জ্বলে উঠে।মিহু পিটপিট করে তাকায়।চোখে আলো সয়ে যেতেই অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকায়।এতো বড় ফুলের বাগান!!

মিহু এগিয়ে যায়।সাদিফ পকেট থেকে ফোন বের করে।হাঁটতে হাঁটতে ফোন চালায় সে।

অভি মিহুর পাশে পাশে হাঁটে।একটা গাছ দেখে দাড়িয়ে পরে মিহু।হলুদ রংয়ের বেশ সুন্দর ফুল ফুঁটে আছে সেটায়।মিহু হাত দিয়ে ধরে কৌতুহলী কন্ঠে বলে,


-এটার নাম কি?


অভি সাদিফের দিকে তাকায়।তাদের থেকে কিছুটা দুরে দুরে হাঁটছে সে।চোখের দৃষ্টি ফোনের মধ্য আবদ্ধ।

অভি মিহুর দিকে কিছুটা ঝুকে বলে,


-এটার নাম আলমান্ডা।বাংলায় বলে অলকানন্দা।


মিহুর উচ্ছ্বসিত কন্ঠস্বর,


-বাহ্,বাংলা নামটাতো অনেক সুন্দর।অলকানন্দা!!


অভি তীর্যক গলায় বলে,


-তুমি নিবে?ছিঁড়ে দিব?


মিহু অভির দিকে তাকায়।অভিকে এত কাছে দেখে হৃদস্পন্দন দৌড়াতে থাকে তার।আমতা আমতা করে বলে,


-নাহ্,ফুল গাছেই সুন্দর লাগে।ছিঁড়ে নিলে সৌন্দর্যের ব্যাঘাত ঘটে।


অভি মিহুর এমন ফেস দেখে সরে দাড়ায়।তার মুখে তার প্রশস্ত হাসি।হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনে ঠেলে দেয় সে।মিহু অদ্ভুতভাবে তাকায়।অভির এই হাত দিয়ে চুল সরানো টাও একদম পারফেক্ট ভাবে করে।

সাদিফ ততক্ষনে মিহুর পাশে এসে দাড়িয়েছে।পকেটে ফোনটা ঢুকাবো ঢুকাতে সে বললো,


-হলো তোর ফুল-ফল দেখা?

মিহু ভ্রু কুঁচকে বলে,

-এখানে ফল নেই ভাইয়া।শুধু ফুল।

সাদিফ ফিচেল হাসে।

-তুই আছিস না?আসত একটা কঁদবেল।

মিহু তেড়ে উঠে।গলা উঁচিয়ে বলে,

-ভাইয়া!!!


-ওর সাথে না লাগলে হয় না তোর?চল ভেতরে চল।কেক কাটবে এখন।

_____________

অভি আগে ঢুকে।পিছে পিছে ঢুকে সাদিফ মিহু।একটা জায়গায় দাঁড়াতেই মিহুকে ধাক্কা দিয়ে সামনে যায় একটা মেয়ে।সাদিফ ধরে ফেলে বিধায় সামলে নেয় মিহু।নয়তো নির্ঘাত এতগুলা মানুষের সামনে পরে গিয়ে মান-সমমান যেতো তার।

সামনে যেয়ে অভিকে জড়িয়ে ধরে নিশাত।অভি চকিতে তাকায়।এতগুলা মানুষের সামনে নির্লজ্জের মতো নিশাত জড়িয়ে ধরেছে তাকে।অভির প্রচন্ড অসস্তি হয়।সাথে তুমুল রাগ।মিহুর দিকে তাকায় সে।মেয়েটা মাথা নিচু করে রেখেছে।আচ্ছা ও ভুল বুঝলো না তো?


মায়ের এত স্পেশাল একটা দিন সিন ক্রিয়েট করে নষ্ট করতে চায়না সে।তাই চাপা সরে ধমকে বলে,


-নিশাত,ছাড় আমাকে।নির্লজ্জের মতো এগুলা কেমন ব্যবহার?

নিশাতের কোনো হেলদোল নেই।সে বলে,


-তুমি কই ছিলে?কতক্ষন যাবত তোমাকে খুঁজছি আমি।

অভি জোরে একটা শ্বাস নিয়ে রাগ দমনের চেষ্টা করে।নিশাতের বাহু ধরে ছাড়িয়ে নেয় নিজের থেকে।ভাগ্য ভালো আশেপাশের মানুষ খেয়াল করেনি।


-নিজের ভালো চাইলে ফারদার এমন করবিনা নিশাত।গট ইট?


নিশাত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।রাগে অপমানে চোখে পানি চলে আসে তার।কেন তাকে অভি পছন্দ করেনা?কেন?

________________

সেদিনের পর আবারও মিহুর সাথে অভির দেখা হয়না প্রায় অনেকদিন।কথায় আছে না "দুরত্বে প্রেম বাড়ে"।

সেটাই হচ্ছে মিহুর সাথে।ভালোলাগাটা তুমুল বেগে ভালবাসায় রুপ নিচ্ছে।তবে বলার সাহস নেই মিহুর।

তার মধ্য জড়তা কাজ করে।সাদিফ,তার বাবা,মা কেমন ভাবে নিবে বিষয়টা?জানা নেই তার।তার উপর ওইদিনের মেয়েটার ওইরকম একটা কাজ।হয়তোবা মেয়েটা অভির কিছু হয়!খুব ঘনিষ্ট কেউ!!


একদিন সকালে নাস্তা করছিলো সে।সাদিফ তার পাশেই বসে খাচ্ছে।মাস্টার্স এর কনভোকেশন ছিলো তার একসপ্তাহ আগে।পড়াশোনা শেষ।পি এইচ ডি করার জন্য আমেরিকার ইউনিভার্সিটিতে এপলাই করেছে সে আর অভি।মাসখানেক লাগবে হয়তো কনফার্মেশন মেইল পেতে।

হঠাৎ করেই মিহুর প্রচন্ড মাথাব্যাথা শুরু হয়।দুহাতে মাথা চেপে ধরে ও।সাদিফ হকচকিয়ে মিহুর মাথায় হাত রেখে বলে,


-কি হলো মিহু?

মিহু কোনমতে বললো,

-মাথাব্যাথা করছে ভাইয়া।খুব মাথাব্যাথা।আমি..বলতে বলতেই সাদিফের গায়ে ঢলে পরে সে।অজানা আতঙ্কে বুক ভারি হয়ে যায় সাদিফের...

,,,, 

Comments

You May Also Like