Home STORY অনুভূতি (পর্ব _৬)
Home STORY অনুভূতি (পর্ব _৬)

অনুভূতি (পর্ব _৬)


 



#পর্ব-০৬


মুখের সামনে বই খুলে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে মিহু।মাথায় যদিও কিছু ঢুকছেনা তবুও পড়তে হবে

দুইমাস পর প্রি-টেস্ট পরীক্ষা।পড়াশোনায় ভীষন চাপ।

গায়ে মোটা কাঁথা জড়ানো তার।এখনো হাল্কা শীত শীত করছে।ওষুধ খেয়ে নিয়েছিলো বলে হয়তো জরটা আর আসেনি।একবার চোখ তুলে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায়,সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে।সারাটা বিকাল ঘুমিয়েই কাটিয়েছে।আধো আধো ঘুমের ঘোরে কিশোরী মনে অভিকে নিয়ে নানান ভাবনা আসছিলো।

এই বয়সটা স্পর্শকাতর।একটু কিছু হলেই আবেগে ভেসে যায় মেয়েদের মন।একফোঁটা আবেগি রং ই যথেষ্ট 

তাদের ছোট দুনিয়াটাকে রঙবেরঙে করার জন্য।


দ্রুতবেগে মিহুর রুমে ভিতরে ঢুকে সজোরে দরজা লাগিয়ে দেয় সাদিফ।

মিহু চোখ তুলে তাকায়।

সাদিফের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।চোখ মুখ ফোলা।গভীর ঘুম থেকে ঢেকে তোলা হয়েছে তাকে।

হুড়মুড় করে মিহুর বিছানায় এসে সটান হয়ে শুয়ে পরলো সে।দুই সেকেন্ড পর টান দিয়ে মিহুর কোলে রাখা বালিশটা নিয়ে মাথার নিচে দিতে দিতে বললো,


-কোনো শব্দ করবিনা।নি:শব্দে পড়বি।আমি ঘুমাবো।


মিহু ভ্রু কুচকায়।তেড়ে উঠে বলে,


-তুমি এখানে ঘুমাবে কেনো?তোমার ঘরে যাও।


সাদিফ পাশ ফিরে মিহুর গায়ের কাঁথা টেনে নিয়ে বললো,


-আমার রুমে মা আর আমেনা খালা।পরিষ্কার টরিষ্কার করছে।


মিহু দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে।ভাইকে কিছু বলে লাভ নেই।সে এখন ঘুমাবে মানে ঘুমাবে।


-ধ্যাত্।এত মোটা করে কাঁথা নেয় কেউ?গন্ডারের চামড়া নাকি তোর!!গরম লাগে না নাকি?


মিহু কাঁথাটা ধরে বললো,


-কাঁথাটা ছাড়ো।আমি ভাঁজ খুলে গায়ে দিয়ে দিচ্ছি।


কাঁথাটা সাদিফের গায়ে দিয়ে লাইট অফ করে আলতো করে দরজা ভিড়িয়ে বের হয়ে যায় মিহু।

রান্নাঘরে যাওয়ার পথে ভাইয়ের রুমে একবার উঁকি দেয়।মা বিছানা ঝাড়াঝাড়ি করছে আর আমেনা খালা বড় একটা লাঠির মতো ঝাড়ু দিয়ে দেয়ালের কোণের ঝুল ঝাড়ছে।ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে মিহু।

তার মা অতিরিক্ত সুচিবাই টাইপের মানুষ।


____________

মিহুর ফোন অনবরত বেজেই চলেছে।সাদিফ কানে বালিশ চেপে রাখা সত্তেও শব্দটা তার কানে এসেই চলেছে।এই মিহুটা ফোন রেখে কই গেলো কে জানে!!!

অধৈর্য হয়ে না দেখেই ফোনটা রিসিভ করে সাদিফ।হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে ঝাঁঝালো ভাবে ভেসে আসে,


-ওই কই মরছিলি তুই?কতক্ষণ যাবত ফোন করছি।...আচ্ছা শোন আমি একটু তোর বাসায় আসতেছি হ্যাঁ?আমার বায়োলজি প্র্যাকটিকাল খাতাটা তোর কাছে না?কালকে জমা দিতে হবেতো।আমারটা কমপ্লিট হয়নি।ওইটা একটু বের করে রাখ আমি এসে নিয়ে....


সাদিফ অবাক হয়।ফোনটা কান থেকে সরিয়ে স্ক্রীনের নামটা দেখে,নাম্বারটা "ইপসা চুন্নি" দিয়ে সেভ করা।সাদিফ ঠোট বাকিয়ে হাসে।ভাবে,একটা মানুষ এক নি:শ্বাসে এত কথা কিভাবে বলতে পারে।হাহ্।

সে ঘুম জড়ানো ভরাট গলায় বলে,


-আমি ওর ভাই।...তুমি আসো,আমি মিহুকে বলে দিচ্ছি।


সাদিফ ইপসার জবাবের অপেক্ষা করে।কোন উওর না পেয়ে আবার বলে,


-ইপসা?


ইপসা দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে।বুকের ভেতর মনে হয় হাতুরি পিটাচ্ছে কেউ।তবুও গলার সর নামিয়ে কোনমতে বলে,


-জি ঠিকাছে ভাইয়া।


সাদিফ ফোন কেটে দেয়।ইপসার মন খারাপ হয়।সাদিফ এমন মুখের উপর ফোনটা কেটে দিতে পারলো?

একটু কথা বললে কি হয়?সে কি এতই খারাপ?আবার পরক্ষনেই ভাবে,কন্ঠ শুনে বোঝা গেল উনি ঘুমিয়ে ছিলেন।ওর ফোন করাতে বিরক্তবোধ করেনিতো?


সাদিফ গলা চড়িয়ে মিহুকে ডাক দেয়।মিহু সবেমাত্র চুলা থেকে কফিটা নামিয়েছে।মগে না ঢেলেই রুমে যায় মিহু।দরজার সামনে দাড়িয়েই বলে,


-কি হয়েছে?


সাদিফ মৃদু ধমকে বলে,


-ফোন নিয়ে যেতে পারিসনা?তোর বান্ধবী ফোন করছিলো।ওর বায়োলজি প্র্যাকটিকাল খাতা বের করে রাখতে বললো।ও নিতে আসতেছে।


মিহু সামনে যেয়ে ফোনটা নেয়।সাদিফ আবারও বালিশে মুখ গুঁজে দেয়।

ফ্ল্যাশলাইট জালিয়ে খাতাটা বের করে মিহু।লাইট জালায়না বিধায় সাদিফের ঘুমে ডিসটার্ব হয়।

___________


ল্যাপটপের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভি।আমেরিকার পড়াশোনা নিয়ে একটা আর্টিকাল পরছে।মাস্টার্ট ফাইনাল ইয়ারটা শেষ হলেই আমেরিকায় পি এইচ ডি করতে যাবে সে।এরকমটাই প্ল্যান তার।

ধনী পরিবারের ছেলে ও।চাইলেই বাবার অফিসের কাজে হাত দিতে পারে সে।কিন্তু না শুধু সেটা করতে তার মন সায় দেয় না।নিজেই কিছু করার ইচ্ছা তার।

আগে নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে তবেই বাবার কাজে হাত দিবে।তার আগে না।


দরজায় নক করার শব্দে ধ্যান ভাঙে তার।ল্যাপটপের থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই বলে,


-"আসো"


দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো নিশাত।পরণে টাইট জিনস আর পাতলা ফিনফিনে একটা টপস্।সোনালি কালার করা চুলগুলো উঁচু করে বাঁধা।

অভি একবার তাকায়।তারপর চোখ নামিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,


-তোর এখানে কি কাজ নিশাত?


নিশাত উওর দেয়না।দৌড়ে এসে অভিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে।অভি চমকায় না।নিশাত এমনই গায়ে পড়া সভাবের।

সে ধমকে উঠে বলে,


-নিশাত ছাড়।তোকে কতবার বলেছি হুটহাট এমন করবিনা।ছাড় বলছি।


নিশাত ছাড়েনা।অভি নিজেই জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নেয়।নিশাত গা ঘেঁষে বসে পরে।ওর গা থেকে তীব্র পারফিউমের গন্ধ আসছে।গন্ধটা সহ্য হচ্ছেনা অভির।মাথা ধরে যাচ্ছে।কই মিহুর গা থেকে তো কতো মিষ্টি ঘ্রান আসে।

একহাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে অভি।

বলে,


-তুই যাচ্ছিস না কেনো?দেখতে পাস না কাজ করছি?


নিশাত অভির হাত ধরে।হাতের বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে বলে,


-তুমি এমন করো কেনো ভাইয়া?দেখো আমি কতো সুন্দর করে সেজে এসেছি তোমার জন্য।দেখো।


অভি তাকায়না।গম্ভীর কন্ঠে বলে,


-তুই আমার জন্য সাজবি কেনো?পাগলামো না করে যা প্লিজ।আমাকে রাগতে বাধ্য করিসনা।


নিশাত হতাশ হয়।সরে বসে অভির থেকে।অভিকে রাগাতে চায়না ও।খটখট করে হীল জুতার শব্দ তুলে বের হয়ে যায় রুম থেকে।


অভি দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে।নিশাতের পাগলামির কারণ সে জানে,বুঝে।মেয়েটা তাকে ভালোবাসে।কিন্তু তার কিছুই করার নেই।সে যে তাকে ভালোবাসেনা।মনে বিরুদ্ধে কার জোর খাটে?নিশাতের শরীরের প্রতি বিনদু মাত্র আকৃষ্ট হয়না সে।জোর করে তো ভালোবাসা যায় না।সে ভেবেছিলো সে কখনোই কাউকে ভালবাসতে পারবে না।কখনো কারো জন্য এমন অনুভূতি তৈরিই হবেনা।

কিন্তু না,সে ভালোবেসেছে,প্রবলভাবে ভালোবেসেছে।প্রকৃতি তাকে ভালোবাসার জালে ফাঁসাতে সক্ষম হয়েছে।

,,,,,,,

Comments

You May Also Like