Home STORY অনুভুতি(পর্ব _৭)
Home STORY অনুভুতি(পর্ব _৭)

অনুভুতি(পর্ব _৭)

 



#পর্ব-০৭


সাদিফ এর বিছানায় পা গুটিয়ে বসে আছে ইপসা আর মিহু।সামনে দুটো বাটিতে পেঁয়াজু আর বিস্কিট রাখা।

সন্ধ্যে হয়ে গেছে তাই ইপসা খাতা টা নিয়েই চলে যেতে চেয়েছিলো।কিন্ত নাজিফা বেগমের জোড়াজোড়িতে 

কিছুক্ষনের জন্য থেকে গিয়েছে।

মিহুর রুমে সাদিফ শুয়ে আছে এজন্যই সাদিফের রুমে এসে বসেছে তারা।


ইপসা খানিকক্ষণ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বললো,


-উনি খুব শৌখিন।খুব গোছানো।


মিহু একটা পেঁয়াজু মুখে নিয়ে চিবাতে চিবাতে বললো,


-ভাইয়ার কথা বলছিস?


ইপসার হুঁশ ফিরে।সে অসস্তিভরা কন্ঠে বলে,


-না মানে হ্যাঁ,রুমটা...রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো।


মিহু অদ্ভুতভাবে হাসে।ইপসা সচেতন চোখে তাকায়।মিহুর কি হলো?সে তো কখনো এতো সিরিয়াস থাকে না।

সে সন্ধিহান কন্ঠে বললো,


-তোর আবার কি হলো?


মিহু কিছু বলবে তার আগেই দরজা খোলার শব্দে দুজনেই সেদিকে ফিরে তারায়।নাজিফা বেগম হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন।দ্রুত গলায় বললেন,


-মিহু,যা সাদিফকে ডেকে বল ইপসাকে বসায় পৌছে দিতে।দেরি হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার।


ইপসা হচকচিয়ে যায়।সাদিফের সাথে বাসায় ফিরবে সে!!তাড়াহুড়ো করে বলে,


-না আন্টি।আমি একাই যেতে পারবো।সমস্যা হবেনা।


নাজিফা বেগম আপোত্তি করে বলেলেন,


-না না।এই সন্ধ্যা বেলা একা একা যাওয়া যাবেনা।বিপদ-আপদ বলে কয়ে আসে না।


ইপসা চুপ করে যায়।এই কথার পিঠে কিছু বলার মতো যৌক্তিক যুক্তি পেলো না সে।অগত্যা রাজি হওয়া ছাড়া কোন উপায়ান্তর পেলোনা ও।

_____________


ধীরপায়ে সাদিফের পিছে উঠে বসল ইপসা।সাদিফের পরণে ট্রাওজার আর হাফ হাতা গেনজি।

নিজের হেলমেটটা পরে ইপসার দিকে আরেকটা হেলমেট এগিয়ে দিলো।


-পরো।বাতাস অনেক...ঠান্ডা লেগে যাবে।আর ট্রাফিকেও থামিয়ে দিবে হেলমেট না পরলে।জানোইতো?


-জি।বলে হেলমেটটা নিয়ে পরে নিলো ইপসা।


সাদিফ বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বললো,


-আমাকে ধরে বসো ইপসা।


ইপসা কিছু বললোনা।সাদিফ যতবারই তাকে নাম ধরে ডাকে ততবারই একটা অদ্ভুত ভালোলাগে তার।সে একটা হাত আলতো করে সাদিফের কাঁধে রাখলো।সাদিফ একনজর তাকিয়ে বাইক চালানোয় ধ্যান দিলো।

পথিমধ্য আর একটা কথাও বলেনি কেউ।

ইপসার বাসার সামনে বাইক থামালো সাদিফ।হেলমেটটা খুলে উসকো খুসকো চুলগুলোতে হাত চালাতে চালাতে বললো,


-পৌছে গেছি।নামো সাবধানে।


ইপসা নামছেনা দেখে ঘাড় ঘুড়ায় সাদিফ।দেখে দুহাত উঠিয়ে পিছনে নিয়ে মাথা নিচু করে হেলমেটের লক খোলার চেষ্টা করছে ইপসা।


-চুলে আঁটকে গেছে?


-হু।


সাদিফ মৃদু হেসে বলে,


-হাত সরাও।আমি খুলে দিচ্ছি।


ইপসা হাত সরায় না।দ্রুত চুলগুলো ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,


-আমি পারবো।


-পারবেনা।বলে ইপসার হাতের উপরই হাত রাখে সাদিফ।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নেয় ইপসা।

সাদিফ খুব যত্ন করে লকটা থেকে আটকে যাওয়া চুলগুলো ছাড়িয়ে নেয়।হেলমেটটা খুলে দিয়ে বলে,


-হয়ে গেছে।যাও।


ইপসা নেমে যায়।মিষ্টি হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে বলে,


-ধন্যবাদ ভাইয়া।আল্লাহ হাফেজ।


সাদিফ হেসে বলে,


-আল্লাহ হাফেজ।যাও বাসায় ঢুকো।


ইপসা না ঢোকা পর্যন্ত ওখানেই দাড়িয়ে থাকে সাদিফ।ইপসা চলে যেতেই একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বাইক স্টার্ট দেয়।


________________

কখন থেকে মিহুর ফোনে কল দিয়েই যাচ্ছে অভি।রিসিভ করার নামই নাই মিহুর।সাদিফকে কল করছে সেও ধরছে না।মেয়েটার আবার জর এলো নাতো।কম তো ভিজেনি!!আবার ভেজা শরীরে কতক্ষণ দাড়িয়েও ছিলো..টেনশনে মাথা ধরে যাচ্ছে তার!!আরেক বার কল করতেই রিসিভ হলো।ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো কন্ঠে শোনা গেলো,


-এই কে তুই?বারবার কল দিচ্ছিস কেনো?মেয়েদের নাম্বার পেলেই ডিসটার্ব করতে মন চায় না?অসভ্য কোথা..


অভি ফোনটা কান থেকে একটু সরিয়ে নেয়।দুই সেকেন্ড পরে আবারো কানে লাগিয়ে বলে,


-আমি অভি..


মিহু দাঁত দিয়ে জিভ কাটে।মৃদু কন্ঠে বলে,


-আ..আপনি?


অভি ব্যঙ্গ করে বলে,


-এখন আপনি?একটু আগেতো তুই তুকারি করছিলা।আর কি যেনো..মেয়েদের ডিসটার্ব করি,অসভ্য?


-আমিতো জানতাম না আপনি ফোন করেছেন..


-আচ্ছা ফাইন।এবারের মতো মাফ করে দিলাম।এখন বলো এতক্ষন কই ছিলো ফোন রিসিভ করনি কেনো?


-আননোন নাম্বার রিসিভ করিনা।আপনি এতবার ফোন দিচ্ছেন তাই ধরলাম..


-গুড।সাদিফ কই?ওকেও তো ফোন দিচ্ছি।

এতক্ষনে বুঝে মিহু।অভি আসলে সাদিফের সাথে কথা বলার জন্য তাকে কল দিয়েছে।তাই তো বলে,অভি তাকে ফোন দিবে কেন?


-আপনি ভাইয়ার সাথে কথা বলবেন তাইনা?আসলে ভাইয়া বাসায় নেই।বাইরে গেছে।


-আমি কখন বললাম ওর সাথে কথা বলবো?


-না মানে...


অভি কন্ঠে কোমলতা নিয়ে বলে,


-তুমি ঠি ক আছো?জর টর আসেনি তো?


মিহুর অদ্ভুত লাগে।অভি কন্ঠ কেমন অন্যরকম শোনায়।সে আমতা আমতা করে বলে,


-জি ঠি ক আছি।


-আচ্ছা রাখছি।আল্লাহ হাফেজ।


-শোনেন?


অভি ফোন কাটতে যেয়েও কাটেনা।জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলে,


-কিছু বলবা?


-আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?


-সেটা কি খুব কঠিন কিছু?


মিহু জবাব দেয়না।ভাবে,আসলেইতো..কি বোকার মতো একটা প্রশ্ন করলো সে।অভি হেসে ফোন কেটে দেয়।

এখন শান্তি লাগছে তার।খুব শান্তি....


Comments

You May Also Like