Home STORY অনুভূতি (পর্ব _৫)
Home STORY অনুভূতি (পর্ব _৫)

অনুভূতি (পর্ব _৫)

 



#পর্ব-৫


মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।সাথে তুমুলবেগে বাতাস।গ্রীষ্মকালের এই কালবৈশাখীর সময় কোনো আগাম বার্তা ছাড়া এমন হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি অস্বাভাবিক কিছু নয়।


একটা দোকানের সামনে টি নের সামান্য ছাউনির নিচে জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে মিহু।ভেজা শরীরে ঠান্ডা শীতল বাতাসের স্পর্শ সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পরতেই থরথর করে কাঁপছে সে।ক্রমশ বৃষ্টির ঝাপটা এসে আরো নিপুণভাবে ভিজিয়ে দিচ্ছে তাকে।পরণে হাল্কা গোলাপি রংয়ের থ্রিপিস।জামার হাল্কা রং ভেদ করে সবকিছুই প্রায় দৃশ্যমান।

মিহু ওড়নাটা মাথা থেকে নামিয়ে ভালোমতো গায়ে জড়িয়ে নিল।ভেজা চুলগুলো কোনরকম হাত দিয়ে গুছিয়ে নেয়।আঁশে পাশে আরো অনেকগুলো লোক দাড়িয়ে আছে।একরাশ অসস্তি নিয়ে এককোণায় নিজেকে আরো একটু গুটিয়ে নিয়ে দাড়িয়ে রইলো সে।


কিছুক্ষণ আগে কলেজ থেকে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলো মিহু।আজকাল হাঁটতে বেশ ভালোলাগে।

আকাশে মেঘ করছে দেখে দ্রুত পা চালায়।তবে তার আগেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে যায়।দৌড়ে এখানে আসতে

আসতেই অনেকটা ভিজে যায়।বৃষ্টির সময় রিকশা পাওয়া যায় না।যাও দু একটা আছে সেগুলো রাস্তার ওপারে ।আর এই ভেজা অবস্থায় রাস্তার ওপারে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় মিহুর পক্ষে।


-মিহু না?


পরিচিত কারো কন্ঠে মুখ তুলে তাকায় মিহু।সামনে থাকা ব্যক্তিটি তার জন্য সবচেয়ে বিরক্তিকর হওয়া সত্তেও তাকে দেখে এখন বিরক্ত লাগছেনা।

প্রশ্নের উওরে মৃদু মাথা নাড়ায় সে।


সামনে বাইক থামিয়ে দাড়িয়ে আছে অভি।সেও ভিজে চুপচুপে।গায়ের শার্ট লেপটে আছে শরীরের সাথে।হেলমেটটা খুলে চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে দ্রুত মিহুর পাশে এসে দাড়ালো সে।


-এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?


-কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম।বৃষ্টি নামে মাঝপথেই.....মিহুর কন্ঠ ঈষৎ কেঁপে কেঁপে উঠে।


অভি মিহুর দিকে আপাদমস্তক একবার চোখ বুলায়।মেয়েটা ভিজে একাকার।শরীরের প্রতিটি ভাঁজ স্পষ্ট।

দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশের লোকগুলোর বিশ্রী চাহনি দেখে মুহুর্তেই মুখ গম্ভীর হয়ে যায়।কিছু না ভেবেই 

একহাতে কাছে টেনে অন্যপাশে নিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের বলিষ্ঠ দেহ দিয়ে লোকগুলোর চাহনি থেকে মিহুকে আড়াল করে দাড়ায়।


মিহু সচকিত হয়ে বলে,


-ভাইয়া কি করছেন?


অভি সামনে দিকে তাকিয়েই কাঠকাঠ কন্ঠে বলে,


-চুপচাপ এভাবেই থাকো।বৃষ্টি কমলে বাসায় পৌছে দিব।


মিহু কাঁচুমাচু করে।কিছু বলতে চেয়েও অভির দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলেনা।

মনে মনে শান্তি পায় সে।লোকগুলোকে মোটেও সহ্য হচ্ছিল না তার।

অভির সপর্শে আর যাই হোক কোন খারাপ ছোয়াঁ নেই।

অভির শরীর ভিজে বরফ ঠান্ডা হলেও তার সংস্পর্শে এসে কাঁপাকাঁপি কমে গেছে মিহুর।উষ্ম উষ্ম আভাস পাচ্ছে সে।


বৃষ্টি হাল্কা কমেছে।মিহুকে এই অবস্থায় নিয়ে বাইকে যাওয়া যাবে না।তাই রিকশা ঠিক করার জন্য বের হতে নিলেই মিহু ইতস্তত কন্ঠে বলে,


-আপনি যেয়ে রিকশা নিয়ে আসেন।আমি এখানেই দাড়াই।


অভি মিহুকে আরো একটু শক্ত করে ধরে সহজ গলায় বলে,


-কেউ কিছু দেখতে পাবেনা।আমি আছিতো.....চলো।


মিহুকে রিকশায় উঠিয়ে রিকশার পলিথিনটা দিয়ে সুন্দর করে ঢেকে দিল অভি।তারপর নিজেও উঠে বসল।

রিকশা চলছে দ্রুত গতিতে।ঠান্ডা বাতাস সাঁই সাঁই করে ছড়িয়ে পরছে তাদের নাকেমুখে।

মিহু আবারও কাঁপছে।দাঁতে দাঁত লেগে মৃদু আওয়াজ হচ্ছে।

অভি শার্টের হাতা ফোল্ড করে চেপে চেপে পানি ঝাড়ছিল।মিহুকে এভাবে কাঁপতে দেখে একহাত পিঠের পিছন দিয়ে মিহুর হাতের বাহুতে রাখে।মধ্যেকার দুরত্ব কমিয়ে আনে।মিহুর গা গরম।জর আসবে বোধহয়।


মিহু গুটিশুটি হয়ে লেগে থাকে অভির সাথে।শীত সহ্য হয়না তার।


-খুব ঠান্ডা লাগছে?


মিহু অস্পষ্ট সরে বলে,


-হু।


রিকশার ঝাকুনিতে নড়েচড়ে উঠে মিহু।তাল সামলাতে অভির হাত খাঁমছে ধরে।


নখের আঁচরে ব্যাথা লাগে অভির তবুও কিছু বলেনা।মিহুর দিকে আর একবারও তাকায়না সে।মুখ ঘুড়িয়ে কঠিন দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে থাকে।মনের মধ্য বিচরণ করা নিষিদ্ধ অনুভূতিগুলো ঝেড়ে ফেলার তীব্র চেষ্টায় অব্যাহত সে।

_____________


ওয়াশরুমে ঢুকে গিজার অন করে দেয় অভি।শার্টটা খুলে ঝুলিয়ে রাখে।মেয়েলি ঘ্রান আসছে তার শার্টটা থেকে।এমনকি তার শরীর থেকেও।

অভি হাসে।আনমনেই বলে,


-"এমন নেশাময় পারফিউম তুমি কোথায় পাও মিহুপাখি?"এই ঘ্রানে আসক্ত হয়ে যাবোতো আমি।


হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে লাল হয়ে নখের দাগ বসে গেছে।মুখে পানির ঝাপটা দেয় সে।চোখ বন্ধ করতেই মিহুর স্নিগ্ধ মুখটা,কাঁপাকাঁপা ঠোঁটগুলো,ভেজা পাপরিতে ঢাকা কালো কালো চোখদুটো ভেসে উঠে।


চোখ খুলে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নেয় অভি।এ কেমন ঝামেলায় পড়লো সে!!!!


শাওয়ার নিয়ে মাত্রই বেরিয়েছে মিহু।বের হতেই দেখে বিছানায় নাজিফা বেগম বসে আছে।হাতে তার খাবারের প্লেট।

মিহু হাল্কা হেসে পাশে বসল।মেয়ের হাতে খাবারটা দিয়ে তোয়ালেটা নিয়ে নিলো নাজিফা।মাথা মুছিয়ে দিতে দিতে বললো,


-ছেলেটা খুব ভালো তাইনা?


-হুম।


-তোদের মধ্য কিছু আছে?


মিহু চমকায়।মায়ের কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছে সে।মায়ের সাথে বেশ ফ্রেন্ডলি সে।তাই সহজ গলায় বললো,


-কি থাকবে মা?কিছুই নেই।


নাজিফা বেগম আর কিছু বলেনা।মেয়ের প্রতি যথেষ্ট বিশ্বাস আছে তার।

উনি চলে যেতেই দরজা লাগিয়ে দেয় মিহু।পাশে থাকা জরের ওষুধটা খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।মনে মনে চিন্তা করে,


-এই প্রথম কারো এতটা কাছে ছিলো সে!!!


,,,,,,

Comments

You May Also Like