Home STORY অনুভূতি (পর্ব _১০)
Home STORY অনুভূতি (পর্ব _১০)

অনুভূতি (পর্ব _১০)


#পর্ব-১০


মিহুর রিপোর্ট হাতে নিয়ে বসে আছে সাদিফ।চোখ লাল হয়ে আছে তার।মুখে উদ্ভ্রানতের আভাস।

কেবিনের বাইরে তার মা অঝোর ধারায় কাঁদছে।বড়মামী সামলাচ্ছে তাকে।সাদিফ তাদের কি বলে সান্তনা দিবে জানা নেই।তার নিজেরই কেমন হিসেবছাড়া লাগছে ।কয়দিন যাবত এত মাথা ব্যাথা হতো মিহুর।ওরা ভাবত নরমাল মাইগ্রেনের ব্যাথা হয়তো।কিন্তু তাদের ধারনা সম্পূর্ণ ভুল ছিলো।মিহুর ব্রেইন টি উমার ধরা পরেছে।


ডাক্তারের কথাগুলো মনে মনে আওড়াতে আওড়াতে বেরিয়ে এলো সাদিফ।মাকে দেখে একটা দীর্ঘ-শ্বাস ছাড়ে সে।বলা বাহুল্য মিহুর বাবা বিদেশ থাকে।তাই সবটাই সাদিফের দায়িত।সে বড়-মামার দিকে তাকিয়ে যথাসম্ভব কঠিন গলায় বলে,


-মামা,ডাক্তার বলেছেন সপ্তাহ খানেকের মধ্য অপারেশনটা করিয়ে ফেললেই ভালো হবে।তবে বাংলাদেশে নয়,ইন্ডিয়ায়।মিহুর তো পাসপোর্ট নেই।তুমি কোনোভাবে সেটা ম্যানেজ করতে পারবেনা?


-অবশ্যই।সেটা কোনো ব্যাপার না।


-ওকে।ইন্ডিয়ায় কোথায় কি করতে হবে সেগুলো আমি দেখে নেব।সেটা নিয়ে টেনশন করার কোনো কারণ নেই।এখন একটু বাইরে যাচ্ছি।মিহুর কিছু ওষুধ আনতে হবে।


সাদিফ বেরিয়ে যায়।মিহু এখনো অচেতন।মূলত ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে তাকে।

বোধকরি স্ট্রেস নিলে তার মাথায় চাপ পরবে।তাই ঘুমিয়ে থাকাই শ্রেয়।


রিকশা থেকে দ্রুত নেমে হসপিটালে ঢুকে ইপসা।অনেকবার মিহুকে কল দেয়ার পরও যখন সে ধরেননি তখন সে বাধ্য হয়েই তার মাকে কল করে। ফোন রিসিভ করে মিহুর মামি।তার থেকেই মিহুর এই অবস্থা জানতে পেরেছে ও।একমুহূর্তও দেরি না করে হসপিটালের নাম জেনেই ছুটে এসেছে সে।রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও মিহু যে তার কাছে কি সেটা শুধু সে আর সৃষ্টিকর্তা জানে।জীবনের একপর্যায়ে যখন সে সুইসাইডের মতো জঘন্য কাজ করতে গিয়েছিল।তখনো ফ্যামিলির মানুষ নয় বরং মিহুই তাকে সামলেছিলো।তাকে বুঝিয়েছিলো।এজন্যই হয়তো আজও বেঁচে আছে সে।


রিসিপসনিসট এর থেকে কেবিন নম্বর জেনে সিঁড়ি দিয়ে উঠার পথে সাদিফকে চোখে পরে তার।তাকে বোধহয় খেয়াল করেনি ,পাশ কাটিয়ে দ্রুত নিচে নেমে যায় সাদিফ।ইপসা ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে উপরে উঠে যায়।সে সাদিফের প্রতি দূর্বল।সেটা সে জানে এবং মানেও।তবে দূর্বলতা টাকে প্রশয় দেয়না ও।দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে।

"একপাক্ষিক ভালোবাসায় প্রশান্তি থাকে না,থাকে শুধু না পাওয়ার প্রবল যন্ত্রনা ও হাহাকার।"

_____________

বিছানায় হেলান দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিলো অভি।হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ।একটা চুমুক দিয়ে কিছু একটা ভেবে সাদিফকে কল দেয় সে।প্রথমবারে রিসিভ হয়না।ভ্রু কুচকে আবারো কল করে।এবার রিসিভ হয়।ওপাশ থেকে সাদিফের ভাঙা কন্ঠে ব্যস্ত গলা শোনা যায়,


-হ্যাঁ,অভি বল।


-তুই কি ব্যস্ত?তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন?


সাদিফ একটা ফাঁকা ঢোক গিলে নিজেকে সামলে বলে,


-মিহু হসপিটালে।ওর....


-ওয়াট!!কেনো?কি হয়েছে ওর?Is she okay?ও ঠি ক আছে তো?


-নাহ্ ও ঠি ক নেই অভি।আমার এতটুকু বোনটার ব্রেইন টি উমার হয়েছে।(কন্ঠ ভার হয়ে আসে সাদিফের)


অভি স্তব্দ হয়ে যায়।কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে তার।ধাক্কাটা নিতে পারেনা সে।কথা বের হয়না মুখ দিয়ে।


-আচ্ছা রাখছি হ্যাঁ?অভি?


ফোন কেটে যায়।সাদিফ কান থেকে নামাতেই আবার রিং হয়।রিসিভ করে সাদিফ।অভি শুধু বলে,

-কোন জায়গায় আছে ও?


সাদিফ হসপিটালের নাম বলে।অভি"ওকে"বলে কেটে দেয়।

_____________

নাজিফা বেগম মিহুর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ইপসা একপাশে বসে হাত ধরে রেখেছে।মিহু বারবার তাদের দিকে তাকাচ্ছে।মাথায় ব্যাথাটা এখন নেই।তবে বুঝতে পারছে তার হয়তো কোন বড় অসুখ হয়েছে।সে স্লান কন্ঠে বলে,


-আচ্ছা আমার কি হয়েছে?আমাকে বলবা তো?


নাজিফার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে।


-ইপসা তুই তো বল?


ইপসা মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলে,

-কিছু হয়নি তোর।একদম পারফেক্ট আছিস তুই।


মিহুর বিশ্বাস হয় না।চোখ বন্ধ করে সে।কিছুক্ষন পর চোখ খুলে বলে,

-ভাইয়া কোথায়?


ইপসা কিছু বলার আগেই সাদিফ ঢুকে কেবিনে।হাতে তার ওষুধের প্যাকেট।

-ভাইয়া এখানে মিহু।মিহু তাকায়।হাসি ফুটে তার মুখে।ইপসা দাড়িয়ে যায়।সাদিফকে বসার জায়গা দেয়।

সাদিফ মিহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নাজিফা বেগমকে বলে,


-মা,তুমি যেয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও।তোমার বিপি লো হয়ে যাবে।


নাজিফা যেতে চায়না।সাদিফ জোর করে ইপসার সাথে পাঠিয়ে দেয় তাকে।এখন মা ও অসুস্থ হয়ে পরলে কয়জনকে সামলাবে সে?

তারা বেরিয়ে যেতেই সাদিফ মিহুর দিকে তাকায়।হাল্কা হাসার চেষ্টা করে বলে,

-মাথা ব্যাথা করছে নাতো?


মিহু মাথা নাড়িয়ে বলে,

-উহু।করছেনা।...আমার কি হয়েছে?কেউ কিছু বলেছেনা কেন?


সাদিফ একটা লম্বা দম ফেলে।নার্স কিছু খাবার নিয়ে ঢুকে।সাদিফ সেগুলো নিয়ে বলে,"আপনি যান,আমি খাইয়ে দিব।"


নার্স চলে যেতেই মিহুকে উঠিয়ে হেলান দিয়ে বসাতে বসাতে বলে,"আমি বলছি"।

মিহুর মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলে,

-দেখ মিহু,আমি যা বলবো তুই কিন্তু একদম ভয় পাবিনা।

মিহু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।সাদিফ আরেক গাল খাবার তুলে দিয়ে বলে,

-তোর মাথায় একটা ছোট্ট টি উমার হয়েছে।ভয়ের কিছু নেই।একটা ছোট্ট অপারেশন করতে হবে জাস্ট।বাংলাদেশেও করানো যাবে।বাট তোর সেইফটির জন্য আমরা ইন্ডিয়ায় করাবো।ওখানের চিকিৎসা খুব উন্নত।

কোনো রিস্ক থাকবেনা।বুঝলি?


মিহু নির্বিকার।তার কেমন রিয়্যাক্ট করা উচিত বুঝতে পারছেনা।সে কি কাঁদবে?কিন্ত কান্না আসছেনা।

সে স্বাভাবিক গলায় বললো,


-আমি কি মারা যাবো ভাইয়া?


সাদিফের বুকটা ধক করে উঠে।সে শক্ত কন্ঠে বলে


-এসব কি বলিস?ব্রেইন টিউমারে কেউ মারা যায় নাকি?কত মানুষের হয় এমন।


মিহু হাসে।সে জানে,"অধিকাংশই বাঁচেনা"।এতোটা ছোট সে নয় যে কিছু বুঝেনা।তবে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলেনা।চুপচাপ খেতে থাকে।তারপর ওষুধ খেয়ে শুয়ে পরে।ঘুমের ওষুধের ডোজ বেশি হওয়ায় কিছুক্ষনের মধ্যই ঘুমিয়ে পরে।


মিহুর ঘুমন্ত মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকায় সাদিফ।খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে তার।চোখের পানি আটকে রেখে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করে।নি:শব্দে তার পাশে এসে দাড়ায় ইপসা।সাদিফ বুঝতে পারে।মাথাটা কিছুটা ঝুকিয়ে ফেলে সে।কাঁদতে চাচ্ছেনা সে।ইপসা পাশে বসে একহাত সাদিফের কাঁধে রাখে।সাদিফ আর আটকাতে পারেনা।ইপসাকে জাপটে ধরে ফুপিয়ে উঠে।

ইপসা থমকে যায়।কি হলো ইপসা?

Comments

You May Also Like